Ichamati

ইছামতি

ইছামতি নদী মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদী থেকে বের হয়ে ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর, নবাবগঞ্জ, দোহার ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান, শ্রীনগর পেরিয়ে লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই নদীর তীরে অবস্থিত উথুলী বাজার, ঝিটকা বাজার, রামকৃষ্ণপুর বাজার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর। নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিমি ও প্রস্থ ১৫০ মিটার, গড় গভীরতা ৮ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৩৫০ বর্গ কিমি। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নদীতে পানিপ্রবাহ থাকে না। ভরা মৌসুমে আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবাহ থাকে। তখন পানিপ্রবাহের পরিমাণ ১২০০ কিউসেক পর্যন্ত হয়।

মনে করা হয়, বার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রধান ঈশা খাঁর নামানুসারে ঈশামতি>ইছামতি নামকরণ হয়েছে। তিনি নিরাপদ ও সংক্ষিপ্ত পথে ঢাকা- মুর্শিদাবাদ যাতায়াতের জন্য সংক্ষিপ্ত এ খাল খনন করেছিলেন। পরে তা নদীর প্রবাহে রূপ নেয়। আবার এমনও মনে করা হয় যে, নদীটি ঈশা খাঁ তাঁর যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন। তাই তাঁর নামে নামকরণ হয়েছে ইছামতি।

একসময় পশ্চিম ঢাকার প্রধানতম নদী ছিল ইছামতি। এই নদীর তীরে আগলা, তীর্থঘাট, সোলপুর, বারুণীঘাট ও যোগিনীঘাট— এই পাঁচটি তীর্থঘাট বিদ্যমান। যোগিনীঘাট ব্রহ্মপুত্র ও ইছামতির সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই নদী জাফরগঞ্জের দক্ষিণে হুরাসাগরের মোহনার বিপরীত দিকে নাথপুর ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে মুন্সীগঞ্জের কাছে যোগিনীঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার ফিরিঙ্গিবাজার ও ইদ্রাকপুর নামক স্থানদ্বয় ইছামতির শাখানদীতীরে অবস্থিত বলে ধারণা দিয়েছেন। ১৭৭৯ সালে প্রকাশিত রেনেলের মানচিত্রে মানিকগঞ্জের ইছামতির মুখ ছিল জাফরগঞ্জের কাছাকাছি। মানিকগঞ্জে বর্তমানে ইছামতি নদী ঘিওর উপজেলা সদরের পশ্চিমে কুত্তার কাছে প্রাচীন ধলেশ্বরীর কাছ থেকে রসুলপুর হয়ে দক্ষিণ- পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। অতঃপর এটি সসিনারা ও গোয়ালন্দের মধ্য দিয়ে শিবালয় উপজেলায় প্রবেশ করেছে।

বর্তমান পদ্মা ও কালীগঙ্গা নদী ইছামতির প্রাচীন প্রবাহখাতের অনেকটা গ্রাস করে ফেলেছে। ইছামতী নদী এখন আর আগের মতো প্রশস্ত নয়। তবু এর তীরে প্রতি শনিবার বসে নৌকার হাট। ছোট-বড় কোষা নৌকা নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। স্থানীয়দের ভাষ্য, এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। হাটে আসা নৌকা বিক্রেতারা বলেন, নৌকার চাহিদা পূরণে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে সপ্তাহে এক দিন বসে হাটটি। বর্ষা মৌসুমে কৃষিকাজ না থাকায় বছরে তিন থেকে চার মাস নিজেদের তৈরি করা নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক শ পরিবার।

Ichamati

The Ichamati River originates from the Jamuna River in Daulatpur Upazila of Manikganj district and flows through Ghior, Shivalaya, Harirampur, Nawabganj, Dohar, and Sirajdikhan and Srinagar in Munshiganj district before merging with the Padma River at Louhajang. Notable markets along the river include Uthuli Bazar, Jhitka Bazar, Ramkrishnapur Bazar, and Nawabganj Upazila headquarters. The river is 90 kilometers long and 150 meters wide, with an average depth of 8 meters. The basin area of the river is 350 square kilometers. The river typically dries up from December to March, with the highest flow in August during the monsoon season, reaching up to 1200 cusecs.

It is believed that the river was named Ichamati after Isa Khan, one of the Baro-Bhuyans, whose name evolved from Ishamati to Ichamati. Isa Khan is said to have dug this short canal to facilitate safe and shorter travel between Dhaka and Murshidabad, which later turned into a river. Another belief is that Isa Khan used the river for his travels, hence it was named after him.

Once the main river of western Dhaka, Ichamati had five pilgrimage ghats along its banks: Agla, Teerthaghat, Solpur, Barunighat, and Joginighat. Joginighat is located at the confluence of the Brahmaputra and Ichamati rivers. The river originates south of Jafarganj, opposite the confluence of the Hurasagar at Nathpur Factory, and extends to Joginighat near Munshiganj. W.W. Hunter suggested that the places Firingibazar and Idrakpur were located along a branch of the Ichamati. Rennell’s 1779 map shows the mouth of the Ichamati near Jafarganj in Manikganj. Currently, the Ichamati flows southwest from the ancient Dhaleshwari near Kutta west of Ghior Upazila headquarters, through Rasulpur, and then into Shivalaya Upazila through Sasinara and Goalanda.

The present Padma and Kaliganga rivers have encroached upon much of the ancient course of the Ichamati. Although the river is no longer as wide as it once was, a boat market is still held on its banks every Saturday. Vendors bring small and large Kusha boats to sell. According to locals, this market is almost 200 years old. The boat sellers say the market has been held weekly since the British period to meet the demand for boats. During the monsoon season, when farming is not possible, several hundred families make their livelihood by selling the boats they have crafted over three to four months.